আগামী বিজয় দিবসের আগে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবতাবিরোধী সব অপরাধের বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায়ে সেলিব্রেশন (উদযাপন) করব, আশা করছি।’
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পাশাপাশি জুলাই বিদ্রোহের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। দায়িত্ব নেওয়ার পরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ কাজ না করায় আমাদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো প্রসিকিউটর ছিল না, আমাদের নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হয়েছে এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পুরো সিস্টেমটি পুনর্গঠন করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে দিনরাত কাজ করছি। আমাদের পুরো টিম সর্বোচ্চ ভালো কিছু করতে পুরোদমে কাজ করছে। আমি আশা করি আমরা আগামী বছরের মধ্যে বিচার বিভাগীয় প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান এবং বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো।
আসিফ নজরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের গোটা শাসনামলে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যা, জুলাইয়ে হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের মতো মানবতাবিরোধী অন্তত চারটি বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপরাধ (তৎকালীন বিডিআর) জওয়ানদের কারাগার থেকে মুক্ত করতে কোনো বাধা নেই।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কার আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো আইন বাতিল করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। কেননা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংঘটিত ডিজিটাল অপরাধ বিষয়ে সারা বিশ্ব জানে এবং স্বীকার করে।
তিনি আরও বলে, এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে হ্যাকিং, ডিজিটাল জালিয়াতি বা অর্থ পাচারের মতো ডিজিটাল অপরাধগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কিছু আইনকানুন দরকার। তবে আইনের কিছু ধারায় সংস্কার আবশ্যক।
সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জনগণের ভালোবাসা ও সম্মান ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। জনগণের কাছে আমাদের অনুরোধ, ভালোবাসা দিয়ে আমাদের কাজের সমালোচনা করুন। আমরা সকল ইতিবাচক সমালোচনা মেনে নিতে প্রস্তুত।
আসিফ নজরুল বলেন, এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যখন পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এই কারণেই আমরা এমন কঠিন সময় পার করছি। এই দেশে এর আগে কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।
মো. মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, গুমের শিকার দিদারুল ভূঁইয়া, মায়ের ডাক’র আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহিদ আহসান।