রাজধানী ঢাকায় মাদকের হোম ডেলিভারি চক্রের অন্যতম মূল হোতা আইসের গডফাদার চন্দন রায় (২৯) আইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়
‘মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয় রাজধানী ঢাকার সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) এর উপপরিচালক জনাব মোঃ মানজুরুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে পরিদর্শক জনাব মোঃ খাইরুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয়ের ডেমরা সার্কেলের একটি টিম আজ ১৫/১২/২০২৪ তারিখ দুপুরে রাজধানী ঢাকার ওয়ারী এলাকা থেকে মাদকের হোম ডেলিভারি চক্রের অন্যতম হোতা আইসের গডফাদার চন্দন রায় (২৯)-কে ২০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামীদের নাম ও ঠিকানাঃ চন্দন রায় (২৯), পিতাঃ জিতেন চন্দ্র রায়, মাতাঃ কাজল রানী রায়,b স্থায়ী ঠিকানাঃ মাস্টারবাড়ি, কুকরাদি, পোস্টঃ পাচগাঁও, থানাঃ টংগীবাড়ি, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানাঃ ৩/বি, ৪র্থ তলা, চন্দ্রচরণ বুশ স্ট্রিট, থানাঃ ওয়ারী, জেলাঃ ঢাকা। অভিযানের বিবরণঃ
গত ০১/১২/২০২৪ তারিখ পরিদর্শক জনাব মোঃ খাইরুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয়ের ডেমরা সার্কেলের একটি টিম শেরেবাংলা নগর থানাধীন শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের গেটের সামনে থেকে ০৭ (সাত) গ্রাম মেথামফিটামিনযুক্ত ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ রিফাত রহমান রোদেলা (২৭)-কে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ করে আজ ১৫/১২/২০২৪ তারিখ দুপুরে রাজধানী ঢাকায় মাদকের হোম ডেলিভারি চক্রের অন্যতম মূল হোতা আইসের গডফাদার চন্দন রায় (২৯) এর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে ওয়ারী এলাকার চন্দ্রচরণ বুশ স্ট্রিট রোডের ভাড়া বাসা থেকে ২০ গ্রাম আইসসহ চন্দন রায় (২৯)-কে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামী চন্দন রায় (২৯) ডিগ্রি পাস করে বিমানবন্দরের লাগেজ পার্টির সদস্য হয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণ ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী পাচারের কাজে জড়িয়ে পরে। করোনাকালীন সময়ে কয়েকজন মালয়েশিয়া প্রবাসী এবং বন্ধুবান্ধব মিলে আইস (ক্রিস্টাল মেথ) মাদক পাচার চক্র গড়ে তোলে। বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে কৌশলে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে সিলিকা জেলের আড়ালে আইস (ক্রিস্টাল মেথ) বাংলাদেশে নিয়ে আসতো চক্রটি। আর দেশের আলট্রা রিচ তথা অভিজাত শ্রেণির ক্রেতার কাছে ‘পার্সেল হোম সার্ভিস’ সিস্টেমে সরবরাহ করতো তারা।
বিজ্ঞাপন
এর আগে মালয়েশিয়া থেকে সোনা ব্যবসার আড়ালে আইস পাচারকালে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের হাতে ৬০০ গ্রাম আইস ও তার পাঁচজন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে বের হয়ে আবারও এই কাজে সক্রিয় হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয় ৫০০ গ্রাম আইসসহ গত ০২ নভেম্বর ২০২২ তারিখ পুনরায় গ্রেপ্তার হয়। মাস ছয়েক জেল খেটে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে চন্দন রায় (২৯) আত্মগোপনে চলে যায় এবং রাজধানীর আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর চক্রটি সক্রিয় করে। প্রাথমিক তথ্যমতে, ঢাকায় চন্দন রায় (২৯) এর চক্রের অন্তত শতাধিক ক্রেতা রয়েছে, যারা নিয়মিত আইস সেবনের সঙ্গে জড়িত। ওয়ারী এলাকায় থাকলেও মূলত গুলশান-বনানী এলাকার বিত্তশালী পরিবারের সদস্যের কাছে বিভিন্ন সময় চন্দন রায় আইস পৌঁছে দিতো। প্রতি গ্রাম আইস ৫-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো চন্দন।
বিজ্ঞাপন
আইস কেন এত ভয়ংকর
অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ছাড়াও এশিয়ার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়া আইসকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্মের মাদকদ্রব্য। বাংলাদেশে যেমন ইয়াবার সর্বনাশ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, ওই সব দেশেও তেমনি আইসকে মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর কারণ আইসে মিথাইলের সঙ্গে শতভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। ইয়াবায় সাধারণত ২০-২৫ ভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। আইস সেবনে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, কিডনি, দাঁত ও লিভারের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। উচ্চমাত্রার এ মাদকে সাময়িকভাবে ক্ষুধামন্দা, বিষণ্নতা, উগ্র মেজাজের মতো সমস্যা তৈরি করে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ওজন কমা, দাঁত নষ্ট হওয়া, স্মৃতিভ্রম, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার নষ্ট হওয়া, ক্যান্সার, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও আকার পরিবর্তন, অহেতুক সন্দেহ রোগ, নিদ্রাহীনতা, অস্বাভাবিক আচরণের মতো সমস্যা তৈরি করে। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে বার্ধক্য ভর করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যের চরম বিপর্যয় ঘটে।