রাজবাড়ীতে আদালত ভবনে ডেকে নিয়ে মো. আবজাল খান (৩০) নামে এক ভ্যানচালককে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজবাড়ী আদালতের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভ্যানচালককে নির্যাতনের বর্ণনার ৩ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ভ্যানচালক মো. আফজাল খান রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের মৃত আনছের খাঁর ছেলে। তিনি ভ্যান চালানোর পাশাপাশি কৃষি কাজ করেন। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভ্যানচালক আবজাল খান বলেন, আমার এলাকার বাড়াইজুড়ি বাজারে কিছু কুকুর থাকে। ওই কুকুরগুলোকে আমিসহ অনেকেই খাবার দিয়ে থাকে। মো. সুমন সাহেবের শ্বশুর বাড়ি আমাদের এলাকায়। গত ৩০ জানুয়ারি শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে কয়েকটি কুকুর তাকে সম্ভবত ধাওয়া দিয়েছে। কুকুরগুলো আমার পালিত মনে করে আমাকে তিনি ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছেন।
আবজাল খান আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই আসাদসহ দুইজন বাড়িতে এসে আমাকে না পেয়ে ফোন করে দেখা করতে বলেন। একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুমন সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করতে চান বলে জানানো হয়। পরে শনিবার দুপুর ২টার পরে মেজো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সুমন সাহেবের কাছে গেলে তিনি আমাকে রাজবাড়ী জজ কোর্টের তৃতীয় তলার একটি রুমে নিয়ে যান। পরে সবাইকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে আমার দুই হাত বেঁধে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমাকে বেধড়ক মারপিট করেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওইখান থেকে বের হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাই।
আবজাল খানের ভাই সাহেব আলী বলেন, সামান্য এক কুকুর নিয়ে রাজবাড়ী আদালতের সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আমার ভাইকে আদালতের তৃতীয় তলায় তার বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে গিয়ে রুম তালাবদ্ধ করে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করেন। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় আমার ভাইকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার ভাই বের হলে তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা সেনাবাহিনীর কাছেও অভিযোগ করব।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রাজবাড়ী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেন বলেন, কুকুরটি বেওয়ারিশ নয়। একজন মালিকের লালন করা কুকুর। এই কুকুর আমাকেসহ অনেককে ধাওয়া করেছে। পরে কুকুরটির ভ্যাকসিন দেওয়া রয়েছে কি না জানতে তাকে ডাকা হয়েছিল। নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ মাহমুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। ওই ভ্যানচালক থানায় এসেছিলেন। পরে তিনি অসুস্থ বিধায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।