নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় গ্রুপিং একটি সাধারণ ঘটনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনেই গ্রুপিং চলছে। বিএনপির অর্ধশত প্রার্থী মাঠে। কর্মিসভা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনি মাঠ গোছাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী
নানা অনুষ্ঠানে তাদের সরব উপস্থিতি যেন নির্বাচনের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। সপ্তাহের শুক্র-শনিবার এ দুদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সভা, আলোচনা সভাসহ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এতে দলের অভ্যন্তরে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। মনোনয়ন পেতে যার যার মতো করে কেন্দ্রেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার সবকটি আসন থেকে অর্ধশতাধিক বিএনপির প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন।
অন্যদিকে গ্রুপিং আর দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আহ্বায়ক কমিটিসহ প্রতিটি উপজেলা শাখা বিএনপিতে। দেখা দিয়েছে সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি। জেলার ৯টি উপজেলায়ই ২ থেকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে বিএনপি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে পুরনো ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে। অভিযোগ তদন্ত করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কসবা-আখাউড়ায় আসেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান। তিনি গ্রুপিং নিরসনে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) : এই আসনে বিএনপি ৩টি গ্রুপে বিভক্ত। দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বেশ কয়েকজন। মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান মামুন। তিনি এর আগে ১৯৯১ সালে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কামরুজ্জামান মামুন বলেন, প্রতিদিনই এলাকায় গণসংযোগ করছি। দলের কর্মসূচি, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ওয়াজ মাহফিলগুলোতেও যাচ্ছি। ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য আমি মাঠে-ময়দানে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
কাজী নাজমুল হোসেন তাপস যুগান্তরকে বলেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার জন্য গ্রুপিং থাকতে পারে। এই উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের কমিটি আমার বাবার হাতে গড়া। আমি মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপির আরেক নেতা মো. সায়েদুল হক সাঈদ গত ১৭ নভেম্বর তার নিজ ইউনিয়ন বড়াইলে এক বড় সমাবেশ করে দলের মনোনয়ন চাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর থেকে নানা কর্মসূচিতে সরব তিনি। অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান বলেন, সারা নবীনগর ঘুরেছি। জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানান তিনি। কৃষক দল নেতা কেএম মামুন অর রশিদ বলেন, কৃষক দল থেকে কুমিল্লা অঞ্চলে আমিই একমাত্র মনোনয়ন প্রার্থী। নবীনগরের প্রত্যেক ইউনিয়নে কৃষকদের নিয়ে সমাবেশ করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) : এই আসনেও বিএনপি ২টি গ্রুপে বিভক্ত। সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এমএ খালেক মনোনয়ন প্রার্থীদের অন্যতম। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দলের প্রার্থী ছিলেন তিনি। আবদুল খালেক বলেন, শতভাগ জনপ্রিয়তা রয়েছে আমার। দলের বড় বড় সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করছি এলাকায়। তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা ও বাঞ্ছারামপুর বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ মনোনয়নপ্রত্যাশী। সম্প্রতি এই উপজেলায় বিএনপির সম্মেলন নিয়ে খালেক ও মেহেদীর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ৪০ জন আহত হন। এসব বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, অনেক বছর পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটা দানবীয় ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা অনেকটাই প্রাণবন্ত। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে চলতে হচ্ছে। জেলার প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও এখন সবাই দল গোছাতে ব্যস্ত। তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে দলীয় কোনো গ্রুপিং নেই। তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে।