যানজটে স্থবির সড়কে চাপাতি হাতে ঘুরছে তিন যুবক। একপর্যায়ে একটি প্রাইভেটকারের জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। মাজহারুল ইসলাম মহসিন নামে ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় ১৬ ডিসেম্বর রাতের। একই সড়কে ১৮ ডিসেম্বর রাতের আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা শেয়ার করে ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন জুনায়েদ চৌধুরী নামের আরেকজন। তিনি জানান, এটা স্পষ্ট তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছিল। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সিগন্যালের সামনে এক মধ্যবয়সি নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। পরের দিন ওই সড়কেই এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরার দৃশ্য ফেসবুকে দেন রাইয়ান আহমেদ রাজু।
একইভাবে এয়ারপোর্ট রোডে যাতায়াতকারীরা মুঠোফোনে ধারণ করা ছিনতাইয়ের ঘটনা শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। এভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আসাদগেট, এয়ারপোর্ট রোড ছাড়াও যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে এমন ঘটনা। সন্ধ্যা নামতেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। এসব ঘটনায় প্রায়শই গুরুতর আহত এমনকি প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভুক্তভোগী ও নগরবাসী প্রশ্ন তুলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়ে। অন্যদিকে ছিনতাই রোধে পুলিশ নানা পদক্ষেপের কথা জানালেও কার্যত ছিনতাই কমেনি।
ফেসবুকে এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের মধ্যে রিয়াদ হাসান মনির লিখেছেন, ‘এইটা কি শুরু হয়ছে? এমন ওপেনলি? দেশে কি আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু আছে? দেখে মনে হচ্ছে, এরা পুলিশের মদদপুস্ট।’ শাহরিয়ার রহমান লিখেছেন, ‘কালকে যদি কোনো ছিনতাইকারী গণমানুষের বা কোনো সিঙ্গেল মানুষের মাইরের ফলে মারা যায়, তাহলে কেউ আফসোস কইরেন না। কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হইলে, জ্যামের মধ্যে এসে ছিনতাই করে, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আর্মি নাকি পুরো দেশে মোতায়েন! হাস্যকর!!!’ নুর ই আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের আইন আরও কঠোর করা উচিত, এইগুলারে পুলিশ ধরলেও ২ মাস পরে ছেড়ে দেয়, পরে আবার শুরু করে। কয়েকটারে মাইরে ৫-১০ বছর জেল খাটালে যদি ঠিক হয়।’ সাকিব মৃধা লিখেছেন, ‘ধরে ধরে গণধোলাই দেয় না কেন? আর পুলিশ প্রশাসন কোথায়? এত পরিমাণে বেড়েছে এসব বলার বাহিরে!’
এদিকে বুধবার রাত ৯টার দিকে সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. কামরুল হাসান (২৩) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর মগবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হাবিবুল্লাহ (১৮) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান। তবে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত দুই তরুণ হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারে কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি পুলিশ।
গত সপ্তাহে টহল বাড়িয়ে ছিনতাই শূন্যের কোঠায় আনতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শেষ রাতের দিকে সাধারণত ছিনতাইটা হয়। আমরা পুলিশকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি, শেষ রাতে যেন প্যাট্রোলিংটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের টহল বাড়িয়ে ছিনতাই যাতে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।’ এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ছিনতাই রোধে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে জানতে শুক্রবার বিকালে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখিছি। কোথায় কোথায় কোন সময়গুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে সেগুলো চিন্তা করছি। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নকে দিয়ে ওইসব এলাকায় টহল ও চেকপোস্ট জোরদারসহ অন্যান্য কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় কারা জড়িত এবং নতুন করে কেউ জড়িয়ে পড়ছে কি না সেসব বিষয় যাচাই ও অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।