বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। আর সিনেমা প্রদর্শনের প্রধান মাধ্যম সিনেমা হল। এক সময় শুধু উৎসব নয়, সারা বছর সপরিবারে সিনেমা হলে যেতেন দর্শক। পারিবারিক সামাজিক সিনেমাগুলো পরিবারের সবাই মিলে আনন্দঘন পরিবেশে উপভোগ করতেন। তখন দর্শকের চাপে টিকিট সংকট দেখা যেত, সিনেমা হলের সামনে ঝুলত ‘হাউজফুল’ লেখা সাইনবোর্ড। এসব এখন শুধুই অতীত। বর্তমানে সিনেমার করুণ দশা। ভালো সিনেমার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। মূলত শূন্য দশকের প্রথম দিক থেকেই সিনেমা ব্যবসায় ধস নামে। এরপর থেকেই একের পর এক বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হল।
রাজধানীতে গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়েছে অনেক সিনেমা হল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ১২ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় কাকরাইলের ‘রাজমণি’। এদিকে মানসম্মত সিনেমার অভাবে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলটিও দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। হলটির কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রযোজক ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই বন্ধ রেখেছি। এ মুহূর্তে খোলার আর কোনো ইচ্ছাও নেই। সিনেমার ব্যবসা একেবারেই এখন নেই। এ ছাড়া ভালো সিনেমাও নেই যে, আমরা আশা নিয়ে থাকব। দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। নভেম্বরের পর যে কটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, সেগুলো সিনেপ্লেক্সেই ব্যবসা করতে পারেনি। আমার সিনেমা হলে চালালে, এসব দিয়ে বিদ্যুৎ বিলও উঠবে না। এ কারণেই আমার হলটি বন্ধ রাখাটাই ঠিক বলে মনে করেছি।’ তিনি আরও বলেন, “দেশের ভালো সিনেমা নেই। তাই ‘পুষ্পা-২’ (ভারতীয় সিনেমা) নিয়ে আশাবাদী ছিলাম যে, এটি আমার এখানে চালাব। একসঙ্গে মুক্তি দিতে পারলে সিনেমাটি ভালো চলত। কিন্তু আমাদের দেশে মুক্তি আটকে দেওয়াতে সেটিও আর হলো না। এখন ঈদের আগে আর ব্যবসা করার সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, ২৪ জানুয়ারি একটি সিনেমা মুক্তি পাবে। এর পরিচালক হল ভাড়া নেওয়ার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চূড়ান্ত হলে কয়েক দিন মধুমিতা সিনেমা হলটি খোলা থাকবে। না হলে মধুমিতা হল বন্ধই থাকবে।”
এদিকে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর হাজার আসনের সিনেমা হল ‘অভিসার’ও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বন্ধ হওয়ার পথে ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর পুরোনো ও স্বনামধন্য সিনেমা হল আজাদ। ঢাকার বাইরেও এমন অনেক বড় সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে বছরজুড়েই থাকত সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের ঢল।