বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ ফের মুদ্রিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক মাসের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি। একইসঙ্গে ইসরায়েল থেকে অবৈধভাবে কেনা আড়িপাতা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ এর ব্যবহার বন্ধেও সরকারকে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়েছে।
এসময় দলটির রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি গাজা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৭৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এখন গাজাকে দখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার পাঁয়তারা চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে। এর অংশ হিসেবে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ পুনর্বহাল করে বার্তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, গাজাকে দখল করতে সেখানকার ফিলিস্তিনি জনগণকে মিশর, জর্ডান ও সৌদি আরবে বিতাড়নের কথা বলা হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে গাজাবাসীকে জাতিগত নিধনের পদক্ষেপ। সমগ্র বিশ্ববাসীকে আমেরিকা ও ইসরায়েলের এ জাতিগত নিধন পরিকল্পনা রুখে দিতে হবে।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, আমরা এক নিষ্ঠুর-নির্দয় ভারতীয় দালাল শেখ হাসিনার অধীনে ছিলাম, তার পতনের আগ পর্যন্ত এখানকার মুসলমানরা মুখ ফুটে কথা বলতে ভয় পেত। মানুষ দাড়ি টুপি নিয়ে বাইরে যেতে ভয় পেত, মসজিদে যেতে চিন্তা করত আমাকে জঙ্গি বলে কি না। সেই ভয় এখন কেটে গেছে।
মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, পৃথিবীর মধ্যে শক্তিশালী একজন মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা আশায় বুক বেঁধেছি, আমরা শেখ হাসিনার সেই দুর্বৃত্ত, ভারতীয় আধিপত্যবাদের শাসন থেকে মুক্ত হব এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের হারানো গৌরব, হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেবেন। এখন পর্যন্ত আমরা পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল ফেরত পাইনি, আমার পাসপোর্ট সংশোধন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল। এখনো পর্যন্ত এটি বন্ধ হওয়ার কোনো ঘোষণা আসেনি। আমরা জানি না এখনো আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ কি না কিংবা শেখ হাসিনার ছেলে জয় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে যে ২০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে তার কি হলো। জায়নবাদী ইহুদিরা যেকোনো সময় এসব তথ্য ব্যবহার করে আমাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানাতে হবে এসব তথ্যের ব্যাপারে তিনি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
এসময় দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে আরব-আমেরিকান ভোটারদের বলেছিলেন তাকে নির্বাচিত করলে তিনি গাজা যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দিয়ে গাজা দখল করার নীলনকশা করেছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরানো যাবে না। তারা সেখানেই থাকবেন এবং ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিদের সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও সৌরভ শাকিল, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তৌহিদ তপু, ওয়াসিম আহমেদ, রাজু আহমেদ ও নাহিদ রানা, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার ও নেছার আহমেদ তুহিন, সহকারী সদস্য সচিব এস এম রাফসানযানি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইসতিয়াক আহমেদ ইফাত ও সিহাব-উল হক প্রমুখ।
এর আগে বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। মিছিলের ব্যানারে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে লেখা ছিল ‘ট্রাম্পের গাজা দখল থামাও, জাতিগত নিধন যুদ্ধাপরাধ’। বিক্ষোভে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।