বরগুনার বামনা উপজেলায় মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ছাত্রলীগ নেতার কাছে বিএনপি নেতার টাকা দাবির দুটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্য ফেসবুকে। টাকা দাবির ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ড দুটি বামনা উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ ইসমাইল হোসেন সোহাগের বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কল রেকর্ডগুলো মিথ্যা জানিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসমাইল হোসেন সোহাগ।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বামনা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রাফান জোমাদ্দার আকাশ ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও কল রেকর্ড পোস্ট করেন। অপর আরেকেটি ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকর্ডও ছড়িয়ে পরেছে ফেসবুকসহ ম্যাসেঞ্জারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে শোনা যায়, তৃতীয় একজনের সঙ্গে কথা বলার বিষয় নিয়ে প্রথমে আকাশ ও সোহাগের মধ্যে কথা শুরু হয়। পরে আকাশ বলেন, “আপনিও বামনার ছেলে আমিও বামনার ছেলে; সে ট্রান্সফার হলে যেকোনো জায়গায় চলে যাবে। আপনার আর আমার কিন্তু বামনায় থাকতে হবে। জবাবে ইসমাইল বলেন তারপরও তার মাধ্যমে হলে আর ঝামেলা থাকেনা। তুমিও নিশ্চিত থাকো আমিও নিশ্চিত থাকি। এর সঙ্গে সেও জড়িত।”
এ কাথার পর আকাশ বলেন, “আপনি কিন্তু নিজেও জানেন, আমি কত টাকা কামাই করেছি, বা কয় টাকা কোথা থেকে এনেছি। দুই টাকা দল থেকে নিয়েছি কিনা তাও আপনি জানেন, বামনার সবাই জানে। জবাবে ইসমাইল বলেন, তোর গুরুর সঙ্গেও কথা হয়েছে এই মাত্র প্রায় ২০ মিনিট। তারা সিঙ্গাপুরে স্বর্ণের মার্কেটে ঢুকেছে স্বর্ণ কিনতে। এখন কালকে সকালে তো ওইটা ফাইনাল দিতে হবে। ফাইনালের দিকে যাবো যে লাইনে কালকে সকালে সে বিষয়টি ক্লিয়ার করতে হবে। এখন তুই তার সঙ্গে কথা বলে ওইটা কর। কোনো ঝামেলা নাই।”
ইসমাইল হোসেন সোহাগকে আরও বলতে শোনা যায়, “তোর গুরু একটা দিক নির্দেশনা দিয়েছে বলছে ওরে একটু-ই করে দেও। সে আবার আমার খালাতো সুমুন্দি হয় তা তো জানোনা। পরে এ কথা শুনে আকাশ বলেন, ভাই আমি আওয়ামী লীগ করছি, আমার ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পোস্ট ছিল তা আমি মানি। কেউ বলতে পারবেনা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আমি কোথাও থেকে দুই টাকা ইনকাম করেছি। টেন্ডারবাজি বা টিয়ার কাবিখার শুধু নামই শুনেছি। যা দিতে হবে তা মহারাজ ভাইয়ের হাত পা ধরে এনে দিতে হবে। এখন কত টাকা কি বলব বলেন আমি তা এনে দেই। আকাশ আরও বলেন, আমারে তো দশের কথা বলেছে। জবাবে ইসমাইল বলেন, আমারে বলে ত্রিশ আর তোরে বলে দশ। তুই যা করবি তার সঙ্গে কথা বলে কর।”
অপর আরেকটি ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের অডিও কল রেকর্ডে ইসমাইলকে বলতে শোনা যায়, “কি অবস্থা? হইছে কথা ওনার সাথে? এসময় অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, আমি টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি, ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে তো মালেশিয়ায় থাকে, সে এক জায়গা থেকে আমাকে নিতে বলেছে। কিন্তু ওই টাকাটা দেবে দুইদিন পর। মানে এক জায়গায় টাকা আছে আমি জানি, টাকা পয়সা সব আমিই আনি। তবে দুইদিন পর ছাড়া সে দিতে পারবেনা। দেখি আপনি ১৫ হাজারের কথা বলেছেন তা আমি পারবো না, হাজার দশেক ম্যানেজ করে দেব। আজকে রাতের মধ্যে এক জায়গা থেকে টাকা আসার কথা ওইটা যাদি আসে তাহলে ওই জায়গা থেকে দশ দেব।” এ সময় তিনি আরও বলেন, “শোনেন আপনি কি আমারে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দিবেন নাকি জামিন করিয়ে দিবেন? পরে তাকে নাম বাদ দেয়ার কথা বলে টাকা লেনদেনের জন্য একটি বিকাশ নাম্বারও দিতে শোনা যায়।”
কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বামনা উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ ইসমাইল হোসেন সোহাগ তা অস্বীকার করে বলেন, “রেকর্ডটি আমার না। বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বামনা উপজেলার সাংগঠনিক সে মামলার আসামি আমাকে ঘায়েল করার জন্য এটি করেছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমর সাথে তার কোনো কথা হয়নি। আমি এ ঘটনা জানিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।”
অপরদিকে বামনা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রাফান জোমাদ্দার আকাশ তার ফেসবুক প্রফাইলের একটি পোস্টে লেখেন, “আমার একটা জিনিস খুব জানার ইচ্ছা যে লোকটা আমাকে চিনে না সেই লোকটা আমার নামে কিভাবে মিথ্যা মামলা দেয় কেউ কি বলতে পারেন?”
জানা যায়, বামনা উপজেলার কলেজ রোড এলাকার বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বরগুনা দ্রুত বিচার আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন সোহাগ বাদি হয়ে ওই মামলাটি করেন। এ মামলায় বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১২০ কর্মী সমর্থকের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ১০০-১২০ জনকে আসামি করা হয়।